SkyIsTheLimit
Bookmark

গ্রাম সরকার রচনা

গ্রাম সরকার
বা গ্রাম সরকারের গুরুত্ব
বা গ্রাম সরকার ও দরিদ্র জনগণ
বা গ্রামীণ উন্নয়নে গ্রাম সরকার

ভূমিকা : বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। তাদের জীবনমান, সামাজিক অবস্থা, শিক্ষার সংকীর্ণতা, দারিদ্রতা প্রভৃতি নিত্য দিনের সঙ্গী। গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সাধনার প্রয়ােজন। কেননা, গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করে। দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির প্রথম শর্ত হলাে দারিদ্র্য-বিমােচন। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে হলে গ্রাম থেকেই কার্যক্রম শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে গ্রাম সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম।

গ্রাম সরকার গঠন : এদেশের গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রাম সরকার পদ্ধতি অন্যতম। ১৯৮০ সালে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে গ্রাম সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন এবং সংসদীয় আইনে পরিণত করেন। গ্রাম সরকার গঠনের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনের উন্নয়ন হতে পারে। এই গ্রামীণ উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারের অনুরূপ একটি শক্তিশালী ব্যবস্থার প্রয়ােজন। কেননা, প্রচলিত ব্যবস্থার চেয়ে গ্রামীণ উন্নয়ন পদক্ষেপ পরিচালনা অধিক কার্যকরভাবে সম্ভব গ্রাম সরকার ব্যবস্থায়। গ্রাম সরকার ব্যবস্থায় এর প্রধান থাকবেন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত ওয়ার্ড মেম্বার এবং উপদেষ্টা হবেন ওয়ার্ডের মহিলা আসনের মেম্ার। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের সাথে গ্রাম সরকারের সুষ্ঠু ও সৃষ্টিশীল সমন্বয়ও সম্ভব। গ্রাম সরকার প্রধান এবং উপদেষ্টা ছাড়াও গ্রামীণ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর আরও ১৩ জন সদস্য থাকবেন।

গ্রাম সরকারের কার্যাবলি : গ্রামের রাস্তাঘাট, কালভার্ট উন্নয়নের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতির বিরুদ্ধে প্রতিরােধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তােলা। এ ছাড়া আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নে সুপারিশ করা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযুক্ত ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা, পুষ্টি, সচেতনতা গড়ে তােলা, গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সমবায় সমিতি গঠন করা, ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন, হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা, মৎস চাষ ও পশুপালনে গ্রামের মানুষকে উৎসাহিত করা গ্রাম সরকারের অন্যতম কাজ। গ্রাম সরকার পদ্ধতির সুবিধা গ্রাম সরকার পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি সুবিধা আছে। সুবিধাগুলাে নিম্নরূপ :
(ক) গ্রাম সরকার পদ্ধতিতে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত সাধারণ মানুষ তাদের বিভিন্ন প্রকার সমস্যার কথা প্রকাশ করার সুযােগ পায় । 
(খ) গ্রামের অন্যায়-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি এবং অপরাধ প্রবণতা কমে যায়। 
(গ) গ্রামে যে সব অপরাধমূলক কার্যকলাপ সংগঠিত হয় তা গ্রাম থেকেই মিমাংসা করা যায়। 
(ঘ) এ ব্যবস্থায় খুব সহজেই শিল্প, হাস-মুরগির খামার, মৎস খামারসহ বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলা যায়। 
(ঙ) গ্রামীণ জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা আনয়নে এবং দারিদ্র্য বিমােচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

উপসংহার : গ্রামীণ জনগণ বা গ্রামীণ জনজীবন আজকের দিনে যেসব সমস্যা-সংকটে ভুগছে তা কার্যকরভাবে নিরসনের জন্যই উপরােল্লিখিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা অপরিহার্য। এই অপরিহার্য দায়িত্বটিই বর্তমানে গ্রাম সরকারের কাধে! গ্রাম সরকার যাদের দ্বারা গঠিত হচ্ছে, তারা সকলেই গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তি এবং গ্রামীণ জীবনের দুর্ভোগ, হতাশা, ব্যর্থতার প্রত্যক্ষ শিকার। কাজেই, গ্রামীণ সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে গ্রামের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশ ঘটিয়ে গ্রামীণ উন্নয়নের তাগিদে তারা সরাসরি সম্পৃক্ত। যে কোন পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আন্তরিকতা, সততা এবং যােগ্যতা-দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ব্যক্তি, দল বা গােষ্ঠির স্বার্থের উর্ধ্বে সকল মানুষের ষার্থই প্রথম ও শেষ বিবেচনা হিসেবে গণ্য করতে হবে। কাজেই আমরা বলবাে, গ্রাম সরকার গঠনই যথেষ্ট নয়; বরং গ্রাম সরকারকে যথার্থ চেতনায় কার্যকর করার ওপর এই ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment