SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা কৃষিকাজে বিজ্ঞান

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান
বা বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি
বা কৃষির অগ্রগতি ও বিজ্ঞান 
বা কৃষি উন্নয়নে বিজ্ঞান 
বা কৃষিকার্যে বিজ্ঞানের অবদান 
বা কৃষি কাজে বিজ্ঞান এর প্রয়ােগ
ভূমিকা : মানব জীবনে সমৃদ্ধি সাধনের জন্য কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়ােগের অপরিহার্যতা সম্পর্কে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। বিজ্ঞান আজ তার সর্বব্যাপী কল্যাণধর্মী বৈশিষ্ট্য নিয়ে মানুষের জীবনের সর্বত্র যেভাবে রূপ লাভ করছে তাতে নির্দ্বিধায় বলা যায় এ যুগ বিজ্ঞানের যুগ। ছােট্ট পূর্বকোণ থেকে শুরু করে সীমাহীন মহাকাশে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। সভ্যতার উৎকর্ষপূর্ণ বিকাশের পেছনে আছে বিজ্ঞানের অবাধ অবদান। মানুষ তার জীবনের নিরাপত্তায় বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছে। অনন্ত জ্ঞান-পিপাসু মানুষের নিরন্তর কৌতূহল থেকে বিজ্ঞানের যে বিচিত্র আবিষ্কার ঘটেছে তার সহায়তায় মানুষ নিজের জীবনকে সুসমৃদ্ধ করেছে। বিজ্ঞানের অবদান বিচিত্র পথে গমন করে সর্বত্রগামী হয়ে উঠেছে-এমন দাবি উন্নত বিশ্বে অযৌক্তিক নয়। 
কৃষির বর্তমান অবস্থা:  বর্তমান কৃষিতে বিজ্ঞানের কিছু প্রভাব পড়লেও এদেশের কৃষিব্যবস্থা এখনও মান্ধাতার আমলের। একজন জীর্ণ কৃষক ততােধিক জীর্ণ দুটি বলদকে ঠেলে কৃষি উৎপাদনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। উন্নত কৃষি পদ্ধতি প্রয়ােগের প্রয়ােজনীয় জ্ঞান যেমন তাদের নেই, তেমনি উন্নত কলাকৌশল প্রয়ােগের জন্য উপযুক্ত আর্থিক সামর্থ্যের দারুণ অভাব। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত কৃষক সমাজের কাছে উন্নত কৃষি পদ্ধতির আহ্বান পৌছায়নি। দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসরত অধিকাংশ কৃষক আর্থিক কারণে উন্নত কলাকৌশলের চিন্তাও করে না। ভূমিহীন বা প্রান্তিক চাষীরা বেঁচে থাকার তাগিদে পরের জমিতে শ্রম দেয়। সেখানে উন্নত পদ্ধতির চিন্তার কোন সুযােগ নেই। কৃষকেরা মহাজনের হাতে বাঁধা পড়ে আছে। ব্যাংক ঋণের বােঝা নিয়ে তাদের চলতে হয়। এসব কারণে কৃষকেরা আবাদী জমি ভালভাবে চাষ করতে পারে না, ভাল বীজ সংগ্রহে ব্যর্থ হয়, প্রয়ােজনীয় সার ও সেচের অভাব ঘটে, কীটনাশকের প্রয়ােগও যথাযথ হয় না, ফসল মাড়াই ও সংরক্ষণের ভাল ব্যবস্থা করতে পারে না। ফলে জমি থেকে যে পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয় তা দুভার্গ্যজনকভাবে অপর্যাপ্ত এবং তা কৃষকের জীবনে সচ্ছলতা আনয়ন করতে পারে না। উৎপন্ন ফসলের উত্তম বাজারও কৃষকেরা লাভ করে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি মিলিয়ে দেশের চাহিদা মেটাবার মত খাদ্যশস্য দেশের মাটি থেকে উৎপাদিত হয় না। তখন বাধ্য হয়ে বিদেশ হতে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আহার্য খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এদেশে অশিক্ষা আর দারিদ্র্যের কারণে কৃষিকাজে আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানলব্ধ কলাকৌশল প্রবর্তন করা পরিপূর্ণরূপে সম্ভব না হওয়ায় খাদ্য। সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। খাদ্যশস্য ছাড়া কৃষির অন্যান্য ক্ষেত্রেও যেমন- ফলফলাদি, শাকসন্জি , ডাল, কলাই, তৈলবীজ ইত্যাদি উৎপাদনে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি প্রয়ােগ করা হয়নি বলে সেখানেও ফলন খুবই কম। এতে দেশের চাহিদা মিটে না। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়ােগ এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়ােগ : মানব জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়ােগে যে অগ্রগতি ও উন্নতি সাধিত হচ্ছে কৃষির বিষয়টি তার ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সচেতন মানব সমাজ উন্নত বিশ্বে বিজ্ঞানের সহায়তায় কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। অগ্রসর বিশ্বের আবাদী জমি বাড়াতে বিজ্ঞানের অবদানকে কাজে লাগানাে হচ্ছে। উন্নত মানের বীজ উৎপাদনের জন্য প্রচুর গবেষণার কাজ চলছে। সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি সাধিত হচ্ছে। খাদ্যশস্যের উপর গবেষণা করে নতুন নতুন জাতের ধান ও অত্যন্ত উন্নতমানের কৃষিপণ্য উৎপাদনের বিথা করা হচ্ছে। চাষাবাদ পদ্ধতি যান্ত্রিকীকরণ করার ফলে আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে চাযাবাদ। সার ও সেচের ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের অনেক অনুবর জায়গায় এখন সবুজ ফসলের সমারােহ। বিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নত দেশগুলা কৃষি ক্ষেত্রে অনেক বেশি সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চাষাবাদ, ফসল সংরক্ষণ , কীটনাশক প্রয়ােগ, উচ্চফলনশীল বীজ উদ্ভাবন ইত্যাদির মাধ্যমে আগের চেয়ে অনেক বেশি গুণ ফসল উৎপাদন করে বিশ্বের চাহিদা মিটানাের উপায় করা হচ্ছে। এভাবে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলেই এখনও বিশ্বের অগণিত ক্ষুধার্ত মানুষের আহার যােগান সম্ভব হচ্ছে। 
এদেশের কৃষিতে বিজ্ঞান : উন্নত ও সমৃদ্ধ বিশ্বের সাহায্য-সহযােগিতায় এদেশে জীবনযাত্রা নির্বাহ হচ্ছে বলে কৃষিকাজেও বিদেশী অবদানের কিছু ছিটেফোটা এসে জুটছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা এদেশের কৃষিকাজে জড়িত হচ্ছে। কিন্তু তা মহানগরীর গবেষণাগারে, জেলা বা থানা সদরের কৃষি অফিসে সীমাবদ্ধ। এখনও তা সব কৃষকের ফসলের মাঠে ছড়িয়ে পড়েনি। দেশে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ধান গবেষণা, কৃষি সম্পর্কিত আরও কতিপয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কৃষি বিষয়ে নানাবিধ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কৃষির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে উচ্চমানের গবেষণা চলছে। আধুনিক বিশ্বে সহজ যােগাযােগ ব্যবস্থার জন্য উন্নত দেশসমূহের কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন ও আবিষ্কারের বাণী এদেশেও স্বল্প সময়ে এসে পৌছেছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার জগৎ থেকে যে এদেশের কৃষিবিজ্ঞানীরা পিছিয়ে পড়ে আছে- এমন ধারণাও সঠিক নয়। কিন্তু উন্নত বিশ্বের কৃষির সাফল্য এদেশের দরিদ্র কৃষক সমাজকে তেমন কোন উপকার যে করতে পারেনি তা দেশের কৃষির অবস্থা লক্ষ্য করলেই সহজে অনুধাবন করা যায়। দেশের কৃষকদের জীবনে বিশ্বের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি আশীর্বাদ হয়ে উঠেনি। 
এখনকার কর্তব্য : কৃষিকাজে বিজ্ঞানের অবদানের কিছু স্বাক্ষর এদেশের মাঠে দেখা গেলেও তাকে ব্যাপক করে তােলা অত্যাবশ্যক। ইতিমধ্যে কিছু প্রভাব যে গােচরে আসেনি তা নয়। ধানের উচ্চফলনশীল বীজ, উপযােগী সার, সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক অবদান কাজে লাগিয়ে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু অশিক্ষা ও আর্থিক দুরবস্থার কারণে কৃষকেরা এই বৈজ্ঞানিক উৎসকে সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগাতে পারছে না। তাই দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করে এবং উদার শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। আধুনিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে এ ব্যাপারে এক ধাপ অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়েছে। কৃষিমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড গ্রাম পর্যায়ে সম্প্রসারিত করতে হবে। উন্নত বীজ, প্রয়ােজনীয় সার, কার্যকর সেচ, ফসল সংরক্ষণ ব্যবস্থা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই আধুনিক বিজ্ঞানের জ্ঞানে কৃষকদের জ্ঞানী করতে হবে। 
উপসংহার : কৃষি জাতির মেরুদণ্ড। আধুনিক বিশ্বের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানভাণ্ডার দিয়ে কৃষিকে উন্নতমানের করা সম্ভবপর হলে জাতির অনগ্রসরতা কাটানাে সম্ভব হবে। দেশের পঁচাশি ভাগ লােক কৃষিকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগাতে না পারলে দেশের অধিবাসীদের জীবনের অনগ্রসরতা কাটনাে সম্ভব হবে না। দেশে বিদেশের কৃষি সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান কৃষকদের জীবনে যাতে অর্থবহ প্রভাব বিস্তার করতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতন হতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment