সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়, সে ভাবতে পারে, যেকোনাে বিষয়ে চিন্তা করতে পারে। যে চিন্তা ও ভাব মানুষকে প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। অন্যান্য পশুপাখিকে কিছু ভাবতে হয় না। এ ছাড়া তাদের সহনশীলতারও খুব বেশি প্রয়ােজন নেই। কিন্তু একজন প্রকৃত মানুষের বৈশিষ্ট্যের মৌল উপাদানই হলাে তার সহনশীলতা। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে মিলেমিশে বাস করাই। মানুষের ধর্ম। সমাজের বাইরে থেকে আমরা কেউই সুন্দর জীবনযাপন করতে পারি না। কিন্তু সমাজের সব মানুষের মধ্যে সবসময় শিষ্টাচার থাকে না। তাদের কেউ বদমেজাজি হতে পারে, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে পারে। আর তখনই মানুষের জন্যে সহনশীলতা গুণটির বিশেষ প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয়। ধৈর্য ও ক্ষমাই মানুষকে মহত্তম পর্যায়ে উন্নীত করে। ক্ষমাশীলতার চিরন্তন শর্ত হলাে যে আমার কূল ভাঙবে, তার কল যেন আমি বাঁধতে পারি; আমাকে যে আঘাত দেয়, আমার দিকে যে বিষেভরা তীর নিক্ষেপ করে, তার প্রতি আমার উত্তর যেন সংগীত হয়। কাঁটা পেয়ে তাকে ফুল দান করার মানসিকতা অর্জন করতে পারলেই ক্ষমাশীলতার ঔদার্য দেখানাে যাবে। একজন আরেক জনকে পর করে দিতে পারে, সাময়িক মােহে নির্মম কথা দিয়ে আঘাত করতে পারে, কিন্তু আমাদের উচিত তাকেই আপন করে নেওয়া। তার জন্যে হৃদয়ের সমস্ত ভালােবাসা উজাড় করে দিতে পারলেই সমাজজীবনে নেমে আসবে শান্তি। আপন-পর ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে ভালােবাসতে পারলে সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে। সংঘাত ভুলে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হলে বিশ্বজুড়ে বাজবে মহামিলনের সংগীত। তখন পৃথিবী থেকে হিংসা- বিদ্বেষ লােপ পেয়ে মানুষের মনে জেগে উঠবে মিলনের চেতনা।
মন্তব্য: মানুষের মহত্তম গুণের একটা হলাে ক্ষমা। মানুষ ভুল করে বা সাময়িক উত্তেজনার বশে নির্মমতা দেখাতে পারে; কিন্তু মানুষের ধর্ম প্রকৃত অর্থে এ রকম নয়। তাই ক্ষমা করে দিলে তার ভেতর নির্মমতার বদলে উদ্বোধন হতে পারে উদারতার।
Post a Comment