SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজ


দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা
বা সমাজ সেবায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা
ভূমিকা: ছাত্রজীবন ভবিষ্যতের পল্লবিত মহীরুহের অস্ফুট পটভূমি। ছাত্রজীবনই হলাে মানুষের প্রস্ভতুতিপর্ব। এরই ওপর নির্ভর করে ছাত্রছাত্রীর পরিণত জীবনের সফলতা-ব্যর্থতা। তাই ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলা অনুশীলনের প্রকৃষ্ট সময়। এ বিশ্ব এক অদৃশ্য দুর্লজ্ঘ্য নিয়মের সূত্রে বাঁধা; ক্ষুদ্রতম অণু-পরমাণু - থেকে বিশাল বিশাল গ্রহ-নক্ষত্র পর্যন্ত সর্বত্রই এক কঠোর নিয়মের শাসন বিরাজিত। প্রভাতে পূর্বদিগন্তে সূর্যোদয় এবং দিবাশেষে পশ্চিম-দিগন্তে সূর্যাস্ত সবই এক দুর্লজ্ঘ্য নিয়মের অধীন। ছাত্রজীবনেও প্রয়ােজন সেই নিয়মের শাসন।
প্রধান কর্তব্য: সংস্কৃত ভাষায় একটা প্রবাদ আছে- 'ছাত্রানং অধ্যয়নং তপঃ।' অর্থাৎ অধ্যয়ন বা লেখাপড়া করাই হচ্ছে ছাত্রজীবনের প্রধান কর্তব্য। সমস্ত রকমের ভােগ-বিলাস ত্যাগ করে একাগ্রতার সঙ্গে নানা বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্যে উপযুক্ত হওয়াই এ সময়ের অন্যতম কাজ। শুধু লেখাপড়া নয়, এর সাথে সাথে অনেক কর্তব্য করতে হয়। যেমন: মাতাপিতা ও গুরুজনের আদেশ মান্য করা, তাদের কথামতাে চলা ও তাদের সেবা-যত্ন করে তাদের থেকে দোয়া ও শুভেচ্ছা পেতে চেষ্টা করা। কথায় বলে 'স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যরক্ষার প্রতি লক্ষ রাখতে হয়। স্বাস্থ্যরক্ষার বিধি বা নিয়মগুলাে মেনে চলতে হয়। জ্ঞান আহরণের জন্যে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়ােজন। প্রত্যেকের মাঝেই অপার সম্ভাবনার বীজ নিহিত থাকে। অধ্যবসায় ও সাধনার দ্বারা সে সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে হয়। পৃথিবীতে যারা অবিনশ্বর কীর্তি রেখে গিয়ে অমর হয়েছেন তারা প্রধানত কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই তা করেছেন। কঠোর শ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সহজাত প্রবৃত্তিকে শানিত করে ছাত্রছাত্রীদেরকে সফলতার পথে এগিয়ে যেতে হবে। অর্জনের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা সমাজ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। জ্ঞানার্জনের সাধনা কেবল পাঠ্যপুস্তকের সীমিত পৃষ্ঠাগুলােতে সীমাবদ্ধ রাখলে জ্ঞান চলবে না।পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচিত ভালাে ভালাে বই পড়ে জীবনের জন্যে কল্যাণকর পাথেয় সয় করতে হবে। গুরুজনদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শিষ্টাচার, বিনয়, কর্তব্যনিষ্ঠা, আনুগত্য, সৃষ্টিশীলতা অর্থাৎ সমাজের উন্নতির জন্যে যা কল্যাণকর তাই অর্জন করতে হবে।
চরিত্র গঠন: মানবজীবনের প্রধান সম্পদ হলাে চরিত্র। আর এ চরিত্র গঠন করতে হয় ছাত্রজীবনেই। কথায় বলে 'চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান। শিক্ষিত হলে কী হবে, সৎচরিত্রের অধিকারী না হলে জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তাই ছাত্রজীবনেই সৎচরিত্র তথা সাধুতা, সত্যবাদিতা, আত্মসংযম, দেশপ্রেম, ধৈর্য প্রভৃতি গুণ আয়ত্ত করে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যে দেশের সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হতে হবে। সর্বদা সত্য কথা বলা, সৎসঙ্গে চলা ও ভালাে বই পড়ার মাধ্যমে এটা সম্ভব হতে পারে। এ প্রসঙ্গে ইংরেজি প্রবাদটি প্রণিধানযােগ্য প্রতি
"When money is lost, nothing is lost 
When health is lost, Something is lost, 
But When Character is lost, everything is lost." 
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার ও সৌজন্যেবােধ: সৌজন্যে ও শিষ্টাচারের ছোঁয়াতেই ছাত্র হয় বিনীত, ভদ্র। নতুন প্রাণস্পন্দনে হয় গৌরবান্বিত। ছাত্রজীবনে গুরুজনদের যে শ্রদ্ধা করতে শিখল না, যার উদ্ধত অবিনীত ব্যবহারে শিক্ষক বিরক্ত, যার রূঢ় অমার্জিত আচরণে বন্ধুরা ক্ষুব্ধ-বেদনাহত, পরবর্তী জীবনেও তার একই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তখন সে হয় অশুভ শক্তি, অকল্যাণের মূর্ত প্রতীক। ছাত্রজীবনই মানুষের সুপ্ত সুকুমারবৃত্তি লালনের শুভক্ষণ। শিষ্টাচার, সৌজন্যে তাে তার মনুষ্যত্ব অর্জনেরই সােপান। এরই মধ্যে আছে নিজেকে সুন্দর ও সার্থকতায় পরিপূর্ণ করে তােলার মহাশক্তি। শিষ্টাচার ও সৌজন্যে প্রকাশের জন্যে ছাত্রদের কিছু হারাতে হয় না, কোনাে অর্থ ব্যয় করতে হয় না, বরং এক মহৎ অঙ্গীকারে তার সমৃদ্ধ জীবন প্রকাশের পথ প্রশস্ত হয়। বিনয়ী, ভদ্র ছাত্র শুধু শিক্ষকের স্নেহ-ই কেড়ে নেয় না, সে পায় শিক্ষকের আশীর্বাদ, পায় তার সাহায্য। সৌজন্যে ও শিষ্টাচারের অভাব ছাত্রকে অবিনীত, স্বার্থপর ও নিষ্ঠুর করে। 
ছাত্রজীবনে সামাজিক নেতৃত্ব: সমাজের যেকোনাে কাজে ছাত্রসমাজ নেতৃত্ব দিতে পারে। মহামারি প্রতিরােধ, বন্যার সময় জনসেবায় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্রছাত্রীরা শুধু অংশগ্রহণ করেই নয়, নেতৃত্বও দিয়ে থাকে। স্বাধীন বাংলাদেশে সমাজসেবায় ছাত্রদের ভূমিকা উল্লেখযোেগ্য। বন্যার্তদের সেবার জন্যে ছাত্ররা কেবল কায়িক পরিশ্রমই করে না, তারা চাঁদা সংগ্রহ করে তহবিলও গঠন করে। এক কথায় ছাত্রজীবনে সমাজসেবার দায়িত্ব ও কর্তব্য অনস্বীকার্য। আমাদের দেশের শতকরা ৫০ ভাগ লােকই নিরক্ষর। নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজ থেকে অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার দূর করা ছাত্রদের কর্তব্য। জনসাধারণের খাদ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে সচেতন করে তােলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে ছাত্রছাত্রীরা সমাজের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের মনে রাখতে হবে আত্মস্বার্থে নিমগ্ন মানুষ যথার্থ মানুষ নয়- পরের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত জীবন সার্থক জীবন। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে 
"পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/এ জীবন মন সকলি দাও, 
তার মত সুখ কোথাও কি আছে/আপনার কথা ভুলিয়া যাও।” 
-(কামিনী রায়) 
ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলানুশীলনের উপযুক্ত সময়: ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলাবােধ ও নিয়মানুবর্তিতা অনুশীলনের উপযুক্ত সময়। এ সময় সজীব-কোমল মানবভূমিতে শৃঙ্খলাবােধ ও নিয়মানুবর্তিতার বীজ বপন করলে উত্তরকালে তাতে অমৃত ফল ফলে। শৃঙ্খলানুশীলন তাই সর্বকালের সর্বদেশের ছাত্রদের অবশ্য আচরণীয় বিধি। 
দেশ গঠনের নামে ছাত্রসমাজের উচ্ছৃঙ্খলতা: সাম্প্রতিককালে ছাত্রসমাজের উচ্ছলতায় সকলেই বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। বলাবাহুল্য, সেই উদ্বেগ অমূলক নয়। তাদের উচ্ছলতার কলঙ্কিত স্বাক্ষর পড়ে পরীক্ষা হলে, বাসে, পথে-প্রান্তরে সমাজজীবনের অলিতে-গলিতে। ছাত্রসমাজ অগ্রযাত্রীর দল। তারা স্বভাবতই অগ্রসর হতে চায়, চায় কর্মব্যস্ততা, কিন্তু আজ তাদের সামনে অগ্রসর হওয়ার সকল পথ রুদ্ধ। কর্মহীনতার বিশাল অবকাশ তাদের মানসক্ষেত্রে যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। দেশব্যাপী আশাহীনতা তাদের নিক্ষেপ করেছে এক গভীর নৈরাশ্যের অন্ধকারে। সেবাদান মানুষের মনুষ্যত্বের প্রকাশ এ আদর্শের আলােকে গণমানুষকে যেকোনাে বিপদসংকুল পরিবেশে সেবাদান করতে গিয়ে কেউ না কেউ রাজনীতিক ব্যক্তি বা দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। সেবাদানের এ সময়টুকুতে রাজনীতিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেক সময় তাদের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করে। স্বভাবত শৃঙ্খলাবােধ হারিয়ে হিংস্রতার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আশ্রয় নিয়ে ছাত্রসমাজ উচ্ছৃঙ্খলতার, কলঙ্কের বােঝা মাথায় বয়ে চলে। তা ছাড়া কুরুচিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ছাত্রসমাজকে উচ্ছঙ্খলতার পথে চালিত করে। ছাত্রসমাজের মধ্যে যদি শৃঙ্খলাবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তবে তাদের উচ্ছংখলতার মূল কারণগুলাের বিলােপ সাধন করতে হবে। কেবল ছাত্রসমাজকে তিরস্কার করে সমস্যার সমাধান হবে না। 
উপসংহার: বর্তমানে বাংলাদেশের সুশীল-সমাজ ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও শৃঙ্খলা দাবি করে। ছাত্রসমাজের মনে রাখতে হবে যে, ছাত্রজীবনই হলাে দায়িত্ববােধ বিকাশের কাল, সামাজিক কর্তব্যবোধে দীক্ষিত হওয়ার সময়। ব্তমান নেরাশ্যের অন্ধকার কিংবা রুচি-বিকৃতির কুয়াশা অপসারিত হয়ে শীঘ্রই নতুন আশা ও আদর্শের সূর্যোদয় হবে। এরপর আসবে নতুন দিন, নতুন জাবন। আমাদের ছাত্রসমাজ তাকে বরণ করার জন্যে যেন পরসন থাকে। এজন্যে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে আত্মনিয়ােগ করে আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে উঠতে হাবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment