বা ডিস এন্টেনা ও বাংলাদেশ
ভূমিকা : বিজ্ঞানের নব নব অবদানে মানববিশ্ব অভূতপূর্ব উন্নতির শীর্ষবিন্দুতে গিয়ে পৌঁছেছে। ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিস্ময়কর যােগাযােগ সাধিত হয়েছে। ফলে ঘরে বসে টেলিভিশনের মাধ্যমে গােটা বিশ্বকে অবলােকন করা সম্ভব হচ্ছে। মানুষ বেতার, টেলিভিশন, ফ্যাক্স ইত্যাদির সাহায্যে পৃথিবীকে একটি পরিবারে পরিণত করেছে। ডিস এন্টনার সাহায্যে একাধিক টিভি চ্যানেলের দ্বারা টিভির বিভিন্ন কেন্দ্রের অনুষ্ঠান দেখার সুযােগ ঘটেছে। মূলত আমাদের দেশেও ডিস 1. এন্টেনার ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। ফলে ডিস. এন্টেনার ভালােমন্দ উভয় প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একথা সত্য, আমরা ডিস এন্টেনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চ্যানেলে যেসব দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভােগ করি তা আমাদের রুচি সংস্কৃতির পরিপন্থি। এমনকি ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবােধের দিক দিয়েও পরিপােষক নয়। সুতরাং, ডিস এন্টেনার মাধ্যমে চিত্তবিনােদনের বৈচিত্র্য এলেও সমাজ ও সংস্কৃতিতে মন্দ প্রভাবটিও প্রকাশিত করছে। কিন্তু ডিসের ইন্টারনেট শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা। অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অভিনব তথ্যাদি অর্জন করতে পারছে এবং জ্ঞানের দিগন্তকে প্রসারিত করছে।
ডিস এন্টেনার আমদানি : বিগত বি. এন. পি. সরকারের রাজত্বকালে ডিস এন্টেনার আমদানি ঘটে আমাদের দেশে। ডিসের সংযােজন অনেকটা শৌখিন এবং ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এর প্রসার ঘটছে। এর মাধ্যমে বিটিভির অনুষ্ঠান বাদেও জিটিভি, এনটিভি, স্টার প্লাস, জি সিনেমা, স্টার মুভিজ, স্টার সপের্টস, ডিডি, পিটিভি, জনটিভি, সনিটিভি প্রভৃতি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ঘরে বসে দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে গ্রামে ও শহরে ডিসের দারুণভাবে ব্যবহার বেড়ে গেছে।
ডিস এন্টেনার ব্যবহার : প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশে ডিস এন্টেনার ব্যবহার শুরু হয়েছে। যদিও ডিস এন্টেনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সৌখিন রুচির প্রতীক। কিন্তু আর্থিক কারণে অনেকেই এ মাধ্যমটি ব্যবহার করতে পারে না। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ডিস এন্টেনার সংযােগ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। ডিস এন্টেনার সাহায্যে বাংলাদেশ থেকে বিটিভি ছাড়াও জিটিভি, এটিএন, চ্যানেল আই, টি, এন, এলটিভি, জি-সিনেমা, স্টার প্লাস, স্টার মুভিজ, স্টার স্পোর্টস, পিটিভি, ডিডি, জনটিভি, সনিটিভি, ডিসকভার, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল প্রভৃতি অনুষ্ঠান ঘরে বসে দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক যে সাংস্কৃতিক প্রবাহ চলছে এ সমস্ত চ্যানেলের সাহায্যে তা প্রত্যক্ষভাবে উপভােগ করা সম্ভব হচ্ছে। প্রায় এক দশকে গ্রামে শহরে এন্টেনার ব্যবহার বেড়েই চলেছে।
উপযোগিতা : দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশের মানুষের জন্য ডিস এন্টেনার ব্যবহার অত্যন্ত ব্যয়বহুল হলেও এর উপযাগিতা আছে। কারণ, আন্তর্জাতিক জীবন চেতনার ধারায় মেধা ও মননকে সমৃদ্ধ করতে হলে অবশ্যই ডিসের জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা হয়। সর্বোপরি শিক্ষা ও জীবনযাত্রার প্রতিযােগিতায় ডিস এন্টেনার সাহায্যে প্রদর্শিত অনুষ্ঠান অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দান করে। কাজেই, হাজার হাজার ডলার ব্যয়ে প্রদান করা শিক্ষা আমরা অল্প ব্যয়ে অর্জন করতে পারছি। সুতরাং, এ দিক দিয়ে ডিস এন্টেনার উপয়ােগিতা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডিস এন্টেনার কু-প্রভাব : পৃথিবীর প্রত্যেকটি বস্তুরই নেগেটিভ ও পজিটিভ দুটি দিক রয়েছে। শুধু স্বভাবের তারতম্যের কারণে এর সুফল ও কুফল নির্ভর করে। কথায় বলে, একই ফুল থেকে ভ্রমর আহরণ করে মধু এবং মাকড়সা আহরণ করে বিষ। অনুরূপ, ডিস এন্টেনারও যেমন সুফল রয়েছে, তেমনি আবার কুফলও রয়েছে। ডিস এন্টেনার কোন কোন চ্যানেলে প্রচারিত বিনােদনমূলক অনুষ্ঠান আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। অনেকে মনে করে আমাদের যুবসমাজ বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাঙালি কৃষ্টির প্রভূত ক্ষতি সাধন করছে। যাকে বলা হয় অপসংস্কৃতি। এ অপসংস্কৃতির ব্যাপক আগ্রাসন আমাদের যুবসমাজকে গ্রাস করছে। এ ধারণাকে অমূলক বলা যায় না। ইউরােপীয় সমাজ সভ্যতার মূল্যবোেধ যেহেতু আমাদের বিপরীত সুতরাং, তাদের প্রভাব আমাদের জন্য মােটেই অথচ ডিস এন্টেনার মাধ্যমে এ প্রভাবপ্রসূত যুবসমাজ তা উপলব্ধি বােধটুকুও নিঃশেষ করে ফেলছে।
উপসংহার : ডিস এন্টেনা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দান। এর মাধ্যমে গােটা বিশ্ব সংস্কৃতিকে আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। যদিও এর ভালােমন্দ দুটি দিকই রয়েছে। তবুও মন্দ দিকগুলাে বর্জন করে ভাল দিকগুলাে গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তি জীবন ও জাতীয় জীবনে ডিস এন্টেনার সুফলগুলোে কাজে লাগানাে দরকার। জীবনের দাবিতে সভ্যতার অনেক উপাদানই আমাদের চাহিদাসূচির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। তাই ডিসকে একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না।
Post a Comment