SkyIsTheLimit
Bookmark

যানজট সমস্যা ও সমাধান রচনা

রাজধানীর যানজট সমস্যা ও সমাধান

ভূমিকা : যানজট অতি সংক্ষিপ্ত অথচ একটা বিড়ম্বনাকর ও সমস্যাবহুল একটি শব্দ। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। রাজধানীতে যতগুলাে সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে যানজট একটা অন্যতম সমস্যা। যানজট দেশের প্রায় সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে চলেছে। এ সমস্যা রাজধানীর জীবনধারাকে ক্রমশ জটিল করে তুলছে। স্বাধীনতার পর রাজধানী হিসেবে মর্যাদা লাভ করায় বিভিন্ন কারণে এখানকার জনসংখ্যা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এখন লােকসংখ্যা প্রায় এক কোটি। বেড়ানাের অছিলায় নয় প্রশাসনিক, ব্যবসায়িক ও অন্যান্য কারণে প্রতিনিয়ত প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজার হাজার লােক রাজধানীতে পাড়ি জমাচ্ছে। তাতে জনবহুলতার পাশাপাশি যানবাহনের ওপরও চাপ বাড়ছে। ফলে যানজট সমস্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দৃশ্যপট : যানজটের কারণে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানাের কোন নিয়শ্চয়তা নেই। এতে যে পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, তার অর্থ মূল্য কয়েকশ' কোটি টাকা। মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে যান নির্গত বিষাক্ত ও কালাে ধোঁয়ায়। রােগী পরিবহণ ও ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ির চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে জীবন ও সম্পদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। তাছাড়া বিষাক্ত ও কালাে ধোয়ার কারণে মানুষের গড় আয়ু হ্রাস পাচ্ছে। হৃদরােগ, হাঁপানি ইত্যাদি রােগ আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। শিশুর আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অথচ যানজটমুক্ত একটি পরিচ্ছন্ন সুন্দর ঢাকা শহর আমাদের কাম্য। ঢাকা শহর একটি মেঘাসিটি। একটি মেঘাসিটিতে যে ধরনের নাগরিক সুযােগ-সুবিধা থাকা দরকার তার কিছুই নেই বললে চলে। নতুন। শতাব্দীকে সামনে রেখে এখনই যানজটের মত মারত্মক সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে পরিকল্পনা নেয়া আশু প্রয়ােজন।

কারণ : ঢাকা শহরের রাস্তায় যেসব যানবাহন চলাচল করে সেগুলাে হচ্ছে গাড়ি, রুট বাস, অটোরিক্মা, ত্যান, রিকশা, ঠেলাগাড়ি ইত্যাদি। কোন কোন এলাকায় গরুর গাড়ি, ঘােড়ার গাড়িও চলে। এখানকার যানবাহনগুলোকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যন্ত্রচালিত ও দ্রুতগামী এবং যন্ত্রচালিত নয় ও ধীরগতিসম্পন্ন। উভয় প্রকার যানবাহন একই রাস্তায় চলাচল করে। গাড়ি চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে এবং যানজটের কারণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুটিযুক্ত যানবাহন চালানাে যানজটের একটি অন্যতম কারণ। ট্রাফিক আইন অমান্য করা এবং ট্রাফিক পদ্ধতি অনুযায়ী রাস্তার ডিজাইন নেই ও ট্রাফিক পুলিশের সীমাহীন ব্যর্থতা রয়েছে। যানবাহনের অনুপাতে রাস্তা অপ্রসস্ত ও আন্ডারপাস তৈরির পরিবর্তে কোন কোন জায়গায় ওভার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের অনীহা এবং কষ্টকর। তাই তারা সরাসরি ব্যস্ত রাস্তা পারাপারে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তাছাড়া পর্যাপ্ত আন্ডারপাস ও Flyover নেই। টাউন সার্ভিসে গাড়ির আকার ছােট এবং সময়সূচি অনুযায়ী টাউন সার্ভিসের গাড়ি বাকা করে বাস স্টপেজে দীর্ঘক্ষণ যাত্রী ওঠানামার জন্য অপেক্ষা করে। তাতে অন্যান্য গাড়ির জন্য চলাচল ব্যাহত হয়। সিটি প্লানিং কাজে রাজউক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ের অভাবে সিটি প্লানিং ব্যাহত হয়। যানজটের এটা একটা কারণ। পর্যাপ্ত ফাকা স্থান, গাড়ি পার্কিং স্থান, ফুটপাথ এসব না রেখে সিটি প্লানিং করা হয়। তাছাড়া ফুটপাতের ডিজাইন - ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় এবং ফুটপাত বেদখল, বস্তি ঘর নির্মাণ, সিমেন্ট বালির দোকান বসানােতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরিকল্পনাহীনভাবে ঢাকার ফুলবাড়ীয়া বাস টার্মিনাল তুলে দিয়ে ঢাকায় তিনটি বাস টার্মিনাল তৈরি করা হয়। তাছাড়া, রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার না থাকায় মূল রাস্তার উভয় পাশে বাইলেন নেই। তাই গাড়ি চলাচলে অনেক বাঁধা। অত্যন্ত ব্যস্ত কিছু রাস্তায় গর্ত করে খুঁটি বসিয়ে সুদৃশ্য প্যান্ডেল বানিয়ে মিটিং মিছিলের আয়ােজন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বিভিন্ন (বিশ্বজনীন) দিবস' উপলক্ষে কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, গার্লস গাইড, স্কাউট কিংবা শিশু-কিশােরদের বড় মাপের ব্যানার ধরিয়ে দিয়ে সব রকমের যানবাহন চলাচলে যন্ত্রণাদায়ক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে ব্যস্ততম সড়কসমূহ মিছিলের সড়কে পরিণত হয়। এটাও যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

যানজটের সমাধান : যানজট নিরসনের জন্য কতিপয় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। সব ধরনের যাত্রীবাহী বাসকে শহরের ভেতর প্রবেশের অনুমতি দেয়া যাবে না। এ জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকতে হবে। যে সব এলাকায় রেল যােগাযােগের সুবিধা আছে সে সব স্থানে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে ট্রেনের ভ্রমণ স্বাচ্ছন্দ্য ও সময়মত যাত্রীদের যাতায়াতের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। প্রয়োজনবশত আরও রেল লাইন এবং ট্রাম ও পাতাল রেল স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

উপসংহার: টাউন সার্ভিসের ক্ষেত্রে একক ব্যক্তি মালিকানায় গাড়ি তুলে দিয়ে এক একটি রুট অথবা একাধিক রুটের জন্য কোমপানি গঠন করে গাড়ি পরিচালনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পাশাপাশি বি আরটি সি'র মত সরকারি সংস্থাও রুট চলাচল করবে। যাত্রীর সংখ্যানুযায়ী রুট নির্ধারণ করতে হবে। শহরের জিরাে পয়েন্ট থেকে শুরু করে সমগ্র রুটকে বৃত্তাকারে বিভিন্ন সেকটরে ভাগ করে সেই মত সরকারের সাথে চুক্তিমত ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। নিয়মিত যাত্রীদের অগ্রিম বা দৈনিক, মাসিক বা বাৎসরিক টিকেট সিস্টেম চালু করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে ধীরগতির ও তিন চাকার দুই স্ট্রোক ইঞ্জিনবিশিষ্ট গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দিতে হবে। সিটি সার্ভিস গাড়ির ক্ষেত্রে মিনিবাসসহ সর্ব প্রকার ছােট গাড়ি এবং পুরাতন যানবাহন শহরে প্রবেশ বন্ধ করে দিতে হবে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, বাইলেন ইত্যাদি তৈরি করে রাস্তার ডিজাইন সুবিন্যাস্ত করতে হবে। পর্যাক্রমে রিকশা তুলে দিতে হবে এবং বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজউক কর্তৃক সিটি প্লান ব্যবস্থা হিসেবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজউক কর্তৃক সিটি প্লান তৈরির সময় দীর্ঘ মেয়াদী কাজের সমন্বয় সাধনের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে রাস্তা বারবার খোঁড়াখুঁড়ি করতে না হয়। পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ রাখতে হবে এবং ট্রাফিক আইনের কড়াকড়ি ব্যবহার থাকতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment