SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা বিদ্যুৎ সংকট ও তার প্রতিকার

বাংলাদেশে বিদ্যুতে লােডশেডিং
বা বিদ্যুৎ সংকট ও বাংলাদেশ
ভূমিকা: বিজ্ঞানের এক প্রীতিকর আবিষ্কার বিদ্যুৎ। বর্তমান সভ্যজগতে বিদ্যুৎ ব্যতীত কোন কল্যাণকর কাজ আশা করা যায় না। বিদ্যুৎশক্তি সমগ্র মানব সভ্যতার পরতে পরতে অনুপ্রবেশ করে সভ্যতার গাঁথুনিকে করেছে সুদৃঢ় ও মজবুত। বিদ্যুৎ এককালের অন্ধকার পৃথিবীকে করেছে আলােকিত, কল-কারখানা ও শিল্প-প্রতিষ্ঠানে এনেছে গতি। মাটকথা, মানব জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ বিদ্যুতের ব্যবহার অপরিহার্য। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পর মাইকেল ফ্যারাডে নিজেই 67 , "Electricity is itself a great power that could easily vibrate the whole universe."
উন্নত দেশে বিদ্যুৎ সংকট: বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে বিদ্যুতের সমস্যা তেমন প্রকট নয়। সেসব দেশের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে না। বড়জোর বছরে দু'চার বার পাচ/দরশ মিনিট বদ্যুৎ সংকটের সৃষ্টি হয়। এতেই বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জনগণের নিকট জবাবদিহিতার সম্মুখীন হন। বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশের প্রাণশক্তি হল বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ সংকট সৃষ্টি হলে শিল্পের উন্নতি ও উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। জাপান, ইটালি প্রভৃতি দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ শূন্যের কোঠায় সীমাবদ্ধ। 
অনুন্নত দেশে বিদ্যুৎ সংকট: অনুন্নত ও ক্রমােন্নয়নশীল দেশসমূহে বিদ্যুৎ সংকট অত্যন্ত প্রকট। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে এসব দেশের শিল্পোন্নয়ন হচ্ছে বাধাগ্রস্ত, জনজীবন হচ্ছে বিপর্যস্ত, কোটি কোটি টাকা মূল্যের কাঁচামাল পচে-গলে হচ্ছে নষ্ট। এভাবে পদে পদে জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বিঘ্নিত হচ্ছে। একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে আর্থিক সংকটের কারণে অন্য দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বা ধার করা সম্ভব নয়। তাই বিদ্যুৎ সংকটের কুপ্রভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলােই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট:  বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট অত্যন্ত প্রকট। এ তীব্র বিদ্যুৎ ঘাটতি এদেশের জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। প্রাত্যহিক জীবনযাপন থেকে শুরু করে শিরােন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন প্রভৃতি ক্ষেত্রেই মানুষ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের চাহিদা অনুযায়ী এখানে ২,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রয়ােজন, কিন্তু উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র ১৬০০-১৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিছুটা উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও যুগ যুগ ধরে বিদ্যুতের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। ফলে লােডশেডিং ও বিদ্যুতে অনিয়ম নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তদুপরি রয়েছে সুষ্ঠু বণ্টনের অভাব। উৎপাদনের ঘাটতি সারাদেশে সমভাবে ভাগ করে দিলে হয়ত সংকট কিছুটা কম হত। কিন্তু দুর্নীতি ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার প্রভাবে তাও সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের ঘাটতি সম্পর্কে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রী নূরউদ্দিন খান TOICA, "The deficit in electric sector in Bangladesh will minimise the present condition after the provision of certain essential things. 
বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণসমূহ:  বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে শিল্পায়ন ও শহরায়ন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রধানত দুটি কারণে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়ােগকারীরা এগিয়ে আসছে না। তন্মধ্যে বিদ্যুৎ ঘাটতি অন্যতম। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণসমূহ নিম্নরূপ ও প্রথমত, জলবিদ্যুৎ ও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচামালের যােগান সম্ভব হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, নতুন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির অভাব। তৃতীয়ত, সরকারের পরনির্ভরশীল মনােভাব। চতুর্থত, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং প্রশাসনিক জটিলতা। 
জাতীয় জীবনে বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাব:  বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ বর্তমানে তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংকট বাংলাদেশের মৌলিক বিষয়গুলোকে অবদমিত করেছে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক বিষয়াদি ও রাষ্ট্রীয় আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড আজ ধ্বংস হতে চলেছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “This crisis in the electric sector will surely be reduced for the betterment of the whole nation." 
সংকট উত্তরণের উপায়: ১৯৯৬ সালের জুন মাস থেকে ১৯৯৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট। এতে উৎপাদন ও রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযােগ্য পরিমাণে। এ ঘাটতি জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থাকে করে দিয়েছে পঙ্গু। জাতি এ তীব্র সংকট থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছে। তাই নিম্নের পদক্ষেপগুলা গ্রহণ করলে বিদ্যুৎ ঘাটতি কিছুটা লাঘব হতে পারে:  প্রথমত, চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, উৎপাদিত বিদ্যুৎ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা এবং শীর্ষমূল থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সমভাবে বণ্টন করা। তৃতীয়ত, অবৈধ সংযােগ বিচ্ছিন্ন করা এবং কৃচ্ছতা সাধনের মাধ্যমে অপচয় রােধ করা। চতুর্থত, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকানপাট ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান চালু রাখা। পঞ্চমত, স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক হােমরা-চোমরাদের কবল থেকে বিদ্যুৎ সেক্টরকে মুক্ত করা। ষষ্ঠত, প্রয়ােজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা এবং বিদ্যুৎ পাচার প্রতিরােধ করা। 
বিদ্যুৎ আমদানির প্রয়ােজনীয়তা : বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে একথা সত্য। কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক ভিত এত মজবুত নয় যে, আমরা ক্রয় করা বিদ্যুৎ দিয়ে দেশের চাহিদা মেটাতে পারব। তাছাড়া এতকাল যাবত নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে যদি আমরা দেশের প্রয়ােজন মেটাতে পারি এখন কেন পারব না? হয়ত অনেকে বলবেন চাহিদা প্রচুর বেড়েছে। তাহলে উৎপাদনও তদনুযায়ী বাড়াতে হবে। অন্যদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হলে নিম্নের তিনটি সমস্যা দেখা দিবে। প্রথমত, দেশজ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্রমশ ভেঙে পড়বে। দ্বিতীয়ত, অন্য দেশের উপর বিদ্যুৎ নির্ভরশীলতা বাড়বে। তৃতীয়ত, জাতীয় অর্থের অপচয় ঘটবে এবং বিদেশের কাছে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। 
বিদ্যুৎ সংকট ও গণপ্রতিক্রিয়া:  জনগণের প্রাত্যহিক জীবনযাপন থেকে শুরু করে জীবনের অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রয়ােজনীয়তা অপরিহার্য। বিদ্যুতের সাহায্যে মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি আলােকিত করে, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা পরিচালনা করে, পরিবারের গৃহস্থালী কাজ-কর্ম করে, কৃষকরা জমিতে সেচের ব্যবস্থা করে, ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে। বিদ্যুতের অভাবে শহর ও নগর ভূতুড়ে পল্লীতে পরিণত হয়। হাইজ্যাক, ছিনতাই বৃদ্ধি পায়। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা। ফলে তারা বিদ্যুতের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমে পড়ে, আন্দোলন ও কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ সম্পর্কে প্রফেসর নূরুল আমিন বেপারী বলেন, “The present Government because of deficiency in electrical sector will gradually lose her popularity unless the problem is solved immediately." 
সংকট প্রতিকারের জেলাভিত্তিক প্রক্রিয়া : বিদ্যুৎ সংকট প্রতিকার করতে হলে জেলাভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়ােজন। প্রত্যেক জেলার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা ঠিকমত বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলায় এখন বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ৯১ সালে বিশ্বব্যাপী কৃষ্ছুতা সাধনের সময়ও এরকম দুরবস্থা ছিল না। সুতরাং এ সমস্যার যদি আশু সমাধান না হয় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ভেঙে পড়বে, দেশ পঙ্গু হয়ে যাবে। তাই এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা বর্তমান সরকারের অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। 
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিদ্যুৎ একটি সর্বজনীন ব্যবস্থা। দেশের উন্নতি-অবনতি অনেকাংশে এর উপর নির্ভরশীল। তাই বিদ্যুৎ সংকটকে প্রতিরােধ করা অতি জরুরী। তাই সরকারের উচিত শীঘ্রই উচ্চতর পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানাে। আমাদের প্রচুর গ্যাস আছে, কয়লা আছে। কাজেই এগুলাের ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প ইউনিট বাড়ানাে উচিত। এতে সহজেই জনগণের জীবনমান উন্নত ও জাতীয় অর্থভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment