SkyIsTheLimit
Bookmark

দারিদ্র্যবিমোচনে ছাগল পালন রচনা


ছাগল পালন ও দারিদ্র বিমােচন
বা ছাগল পালন ও সামাজিক উদ্দ্যোগ

ভূমিকা : দারিদ্র্ একটি ভয়াবহ বাস্তবতা। এটি অপরিচিত কোন বিষয় নয়। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলাের অধিকাংশ জনগােষ্ঠাই এ বাস্তবতার মুখােমুখি। এ বিশাল জনগােষ্ঠীর মানবেতর অবস্থার পরিবর্তন, অর্থাৎ, জীবনমান উন্নয়নে ছাগল পালন একটি অন্যতম পন্থা।

ছাগল পালনের সুবিধা : বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও এ দেশের আবহাওয়া ছাগল পালনের জন্য বিশেষ উপযােগী। কেননা, ছাগল পালনের জন্য অন্যান্য পশুর মত চারণভূমির দরকার হয় না। খেতের আইল, রাস্তার ধার, বাড়ির আশেপাশের অনাবাদি জায়গার ঘাস, লতা, গুল্ম, বিভিন্ন প্রকার গাছপালার পাতা খেয়ে ছাগল জীবনধারণ করে। ফলে ছাগল পালনের জন্য বিশেষ ধরনের খাবার দেয়ার প্রয়ােজন হয় না, আবার বেশি পুঁজিও লাগে না। অল্প জায়গায় খামার পদ্ধতিতে অধিক ছাগল পালন করা যায়। এছাড়া একটি ছাগল প্রতি বছর দু’বার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবারে ১ থেকে ৪টি পর্যন্ত বাচ্চা পাওয়া যায়। ছাগল পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরাট জনগােষ্ঠীর মাংসের চাহিদা পূরণ করা যায় এবং ছাগলের চামড়া বিক্রয় করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রার্জন করা যায়।

ছাগলের প্রকারভেদ: বাংলাদেশে কয়েক জাতের ছাগল পাওয়া যায়। তার মধ্যে ব্লাক বেজ্গ বা কালাে বোল এবং যমুনা পাড়ি ও রাম ছাগলের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ছাগল পালনে সামাজিক উদ্দ্যোগ : বাংলাদেশের মানুষ অধিকাংশই গ্রামে বসবাস করে। এবং তাদের অধিকাংশই দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে। দারিদ্র বিমােচনে ছাগল পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। খামারপদ্ধতি এবং পারিবারিক উভয় ভাবেই ছাগল পালন করা যায়। গরীব বিশেষ করে ভূমিহীন প্রান্তীক চাষী, বেকার যুবক, দুঃস্থ মহিলা ছাগল পালন করে, তারা অনেকেই সচ্ছলতা অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে যুবসমাজের উদ্দ্যোগে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছাগল পালনের খামার। দরিদ্র জনগােষ্ঠীর বিরাট অংশকে এর কবল থেকে মুক্ত করতে হলে ছাগল পালনের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ছাগল পালনে সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার উদ্দ্যোগ : দারিদ্র্যবিমােচনের জন্য সামাজিক আন্দোলনই যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশের বিরাট জনগােষ্ঠীকে এর কবল থেকে মুক্ত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থাদের এগিয়ে আসা দরকার। উন্নত পদ্ধতিতে ছাগল পালনের জন্য জনসাধারণের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ, শিক্ষিত বেকার যুবকদের পশুর রােগ ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে শিক্ষিত করে গড়ে তােলা দরকার। কারণ, ছাগলের বিভিন্ন ধরনের রােগ দেখা যায়। তড়কা, ওলান প্রদাহ, ক্ষুরারােগ, জলতাঙ্ক, বসন্ত, বিভিন্ন প্রকার কৃমি, উকুন ইত্যাদি রােগের সম্মুখীন হয়। এসব মারাত্মক রােগের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না।

দারিদ্র্য বিমােচনে ছাগল পালনের কর্মসূচি : দারিদ্র্যের কঠিন বন্ধন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে ছাগল পালনের ক্ষেত্রে এক সুদূর প্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা কারাে এ কার পক্ষে সম্ভব নয়। ছাগল পালনের মাধ্যমে দারিদ্র বিমােচনের পথকে সুগম করতে হলে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি হাতে নেয়া দরকার। কর্মসূচিগুলাে হলাে:
১। ছাগল পালনের অভিযানকে সফল করতে একে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।
২।সাধারণ জনগণের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৩। সরকারি অভিযান হিসেবে রেডিও, টেলিভিশনে এর ব্যাপক প্রচার করতে হবে।
৪। সরকারি উদ্দ্যোগে ছাগলের বিভিন্ন প্রকার রােগপ্রতিরােধের জন্য সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 
৫। ছাগল পালনের জন্য উপযােগী বিভিন্ন রকম খাবারের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 
৬। ছাগল চাষী যাতে ছাগলের এবং চামড়ার যথার্থ মূল্য পায় তার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। 
৭। ছাগলের অভিযান সফল হলে দেশ এবং জাতি উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। 

উপসংহার : এ দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র হলেও এদের আছে প্রচুর সম্ভাবনার সমাহার। তারই অংশ-বিশেষ হিসেবে দারিদ্র্যবিমােচনের জন্য ছাগল পালনের অভিযান বাস্তবায়িত হলে আমাদের দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment