সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম: যে মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ একে অপরের সাথে তাদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ইত্যাদি আদান-প্রদান করতে পারে, তাকে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম বলে। যােগাযােগের মতাে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটা সময় কবুতর কিংবা হাতের লেখা চিঠির উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু সময়ের পথ- পরিক্রমায় বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে মানুষ সহজতর মধ্যমগুলাে ব্যবহার করছে। এই যােগাযােগের এমনই একটি মাধ্যম হলাে Social Networking Site বা সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম। এটি ব্যবহার করে উন্নত দেশগুলাে তাদের যােগাযােগকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর করে ফেলেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতাে উন্নয়নশীল দেশও পিছিয়ে নেই। আর এটা সম্ভব হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে। নিম্নে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাে সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে।
ফেসবুক (Facebook): ফেসবুক ( (Facebook) বিশ্ব সামাজিক আন্তঃযােগাযােগ ব্যবস্থার একটি ওয়েবসাইট। ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাের মধ্যে ফেসবুকই বৃহত্তম। এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন মার্কজুকারবার্গ। তার হাত ধরেই ২০০৪ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি ফেসবুক যাত্রা শুরু করে ছিল। এটি ব্যবহারকারীগণ বন্ধু সংযােজন, বার্তা প্রেরণ এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি হালনাগাদ ও আদান-প্রদান করতে পারেন । সেই সাথে ব্যবহারকারী শহর, কর্মস্থল, বিদ্যালয় এবং অঞ্চলভিত্তিক নেটওয়ার্কেও যুক্ত হতে পারেন। ফটো, ভিডিও শেয়ার করতে পারেন। এমনকি বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনও ফেসবুকে দেওয়া যায় ।
ব্লগ (Blog): Blog শব্দটি ওয়েবলগ থেকে এসেছে। যার অর্থ হলাে। আলােচনা বা তথ্য সম্পর্কিত সাইট। বর্তমান বিশ্বে তথ্যের চাহিদা খুবই প্রয়ােজনীয় হয়ে উঠেছে। বই বা লাইব্রেরিতে হাজার হাজার বই ঘেটে প্রয়ােজনীয় তথ্য যােগাড় করা কষ্টকর এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর এই প্রয়ােজন মেটানাের জন্য অনলাইনভিত্তিক ওয়েবলগ এর যাত্রা শুরু হয়, যা পরবর্তীতে ব্লগ হিসেবে প্রচলিত হয়। যিনি ব্লগে পােস্ট করেন। তাকে ব্লগার বলা হয়। মানুষের তথ্য চাহিদা পূরণের জন্য ব্লগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিনিয়তই মানুষ ব্লগের কল্যাণে। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তথ্য অনুসন্ধান করছে এমনকি গবেষণাসহ বিভিন্ন জরিপ পরিচালনা করছে। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন ব্লগের জন্ম হচ্ছে। সেই সাথে তৈরি হচ্ছে অনলাইনে লক্ষ লক্ষ নিবন্ধ।
টুইটার (Twitter): বর্তমান বিশ্বে যতগুলাে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে টুইটার (Twitter) অন্যতম। টুইটার সামাজিক আন্তঃযােগাযােগের ব্যবস্থা এবং মাইক্রোব্লগিংয়ের একটি ওয়েবসাইট। যেখানে ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ ১৪০ শব্দের বার্তা আদান-প্রদান ও প্রকাশ করতে পারেন। ২০০৬ সালে মার্চ মাসে টুইটারের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, হলিউড, বলিউড থেকে শর করে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিবর্গ টুইটার ব্যবহার করে থাকেন।
গুগল প্লাস: গুগল প্লাস (Google+) হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সামাজিক যােগাযােগের একটি সাইট। এটি চালু হওয়ার পর থেকেই মূলত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। গুগল প্লাস জনপ্রিয় সামাজিক যােগাযােগের সাইট ফেসবুকের সাথে কিছুটা মিল থাকবে। সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই এ ধরনের উদ্যোগ।
ইউটিউব (Youtube): (Youtube) একটি ভিডিও আদান-প্রদান করার ওয়েবসাইট। এটি বর্তমানে ইন্টারনেট জগতের অত্যন্ত জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট, যার মাধ্যমে এর সদস্যরা ভিডিও আপলােড, দেখা এবং আদান-প্রদানের কাজ করে থাকে। এখানে ভিডিও পর্যালােচনা ও অভিমত প্রদানের সুবিধাও রয়েছে। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত এ সাইটটি নির্মাণের পেছনে ছিলেন মূলত পে-প্যাল প্রতিষ্ঠানের তিন প্রাক্তন চাকরিজীবী চ্যাড হারলি, স্টিভ ব্যান আর বাংলাদেশি বংশােদ্ভূত জাভেদ করিম ।
স্কাইপ (Skype): স্কাইপ একটি ভিওআইপি সেবা এবং সফটওয়্যার এ্যাপ্লিকেশন। সামাজিক যােগাযােগের এই মাধ্যমে ব্যবহারকারী ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে পরস্পরের সাথে ভয়েস, ভিডিও এবং তাৎক্ষণিক বার্তার সাহায্যে যােগাযােগ করে থাকেন। ২০০৩ সালে ডেনমার্কের ধমিজা জানুজ ফ্রিজ এবং সুইডেনের নিকলাস জেনস্ট্রম স্কাইপ প্রতিষ্ঠা করে ।
অন্যান্য মাধ্যম: উপরে বর্ণিত সামাজিক যোেগাযােগের মাধ্যম ছাড়াও আরও কিছু সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম রয়েছে যেমন: মাইস্পেস, ব্লগিমেট, এওএল ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জার, ফেসটাইম (ম্যাকিন্টোল), গুগল টক, গুগল ভয়েস, আইসিকিউ, আইবিএম লােটাস, সেমটাইম, উইন্ডােজ লাইভ মেসেঞ্জার, জিমেইল, ইয়াহু মেসেঞ্জার ইত্যাদি।
সামাজিক যােযােগ মাধ্যমের সুবিধা: সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাের বহুবিধ সুবিধা রয়েছে। যেমন—
১. সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাে ভৌগােলিক দূরত্বের বাধাকে অতিক্রম করে মানুষকে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
২. যােগাযােগ মাধ্যমগুলােতে পুরনাে বন্ধু খোঁজা, নতুন বন্ধু তৈরি করা ছাড়াও নিজের বৃত্তের বাইরে অন্যকেও আমন্ত্রণ জানানাে সম্ভব।
৩. এই মাধ্যমগুলােতে খুব সহজে বিভিন্ন সংবাদ ও তথ্য পাওয়া যায় ।
৪. এর সদস্য হতে খুব একটা খরচ লাগে না। একইভাবে কম শিক্ষিতরাও সহজে ব্যবহার করতে পারে।
৫. সামাজিক মাধ্যমগুলাে বিভিন্ন ভাষা সমর্থন করে। পাশাপাশি এগুলাের ব্যবহারিক শব্দও মােটামুটি সহজ।
৬. স্বাধীন মত প্রকাশ এবং ভালাে লেখক সষ্টিতে সামাজিক মাধ্যমগুলাের ভূমিকা রয়েছে।
সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাের অসুবিধা: সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাের সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন-
১. সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাের অপব্যবহারে নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক বিপর্যয় ঘটছে।
২. এই মাধ্যমগুলাে ব্যবহার করে সহজে সন্ত্রাসীরা তাদের সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
৩. শিশুদের সুস্থ বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যম। সেই সাথে তাদের শরীরের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে যেমন- আর্থরাইটিস, স্থূলতা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল, ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
৪. সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলােতে মানুষ তাদের জীবনের নানা দিক তুলে ধরছে। ফলে সুবিধাবাদী দেশগুলাে গােয়েন্দা ও নিরাপত্তার কাজে এই মাধ্যমগুলােকে কাজে লাগচ্ছে।
উপসংহার: বিশ্ব্যাপী সামাজিক যােগাযােগের মাধ্যমগুলো খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেটি পৃথিবীর ভৌগােলিক দূরত্বকে হাতের মুঠোয় আনতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এর নেতিবাচক দিকগুলাে সচেতনতার সাথে পরিহার করে ইতিবাচক দিকগুলাে কাজে লাগাতে পারলে দেশ ও জনগণ উভয়ই উপকৃত হবে। সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাের ব্যাপক প্রসার এবং এগুলাের মাধ্যমে ভৌগােলিক দূরত্বকে হাতের মুঠোয় আনা সম্ভব হয়েছে শুধু তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের ফলে ।
Post a Comment