কম্পিউটার কি : গ্রিক শব্দ Compute শব্দ থেকে কম্পিউটার শব্দের উৎপত্তি। যার আভিধানিক অর্থ গণনাকারী বা হিসাবকারী যন্ত্র। কম্পিউটার দিয়ে মূলত গাণিতিক, যুক্তি ও সিদ্ধান্তমূলক কাজ করা যায়। এ ন্ত্র মানুষের দেয়া যৌক্তিক উপাত্তর ভিত্তিতে অতি দ্রুত সঠিকভাবে কোন কার্য সম্পাদন করতে পারে এবং নির্ভুল ফলাফল প্রদান করতে পারে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার : উন্নত বিশ্ব আজ শিক্ষার মাধ্যমে হচ্ছে কমিপিউটার। বিস্ময়কর ক্ষমতাধর এ যন্ত্রটি শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার নিম্নে তুলে ধরা হল।
১. শিক্ষাদান : কোন একটি কাহিনী পড়া বা শােনার চেয়ে ঐ কাহিনী নিয়ে তৈরি সিনেমা বা চলচ্চিত্র মনে অনেক বেশি রেখাপাত করে। কম্পিউটারের সাহায্যে শিক্ষাদান বা গ্রহণের ক্ষেত্রে এর সবক টি সুযােগ কাজে লাগানাে যায়। নিচের ক্লাশে বর্ণ পরিচয়, গল্প, ইতিহাস কার্টুনের মাধ্যমে তুলে ধরলে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী হয়। উপরের ক্লাশেও বিজ্ঞান, ভূগােল, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়গুলাে রঙিন চিত্রে তুলে ধরে পাঠদান করা যায়। আর বিজ্ঞানের বিভিন্ন ব্যবহারিক কার্যাবলি, প্রাণিজগতের বিচিত্র জীবনযাপন প্রাণালী, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কার্যাবলি, প্রাণিজগতের বিচিত্র জীবনযাপন, প্রণালী, বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ কম্পিউটারে সচল চিত্রে তুলে ধরা যায়। মাত্র দু'একটি বােতাম টিপলেই যখন প্রয়ােজন, তখনই দেখা-শুনা-জানা যায় জন্ম বা মৃত্যুহার, রাজধানীর নাম বা শিক্ষার হার প্রভৃতি সব তথ্য। কাজেই প্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতির চেয়ে কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষাদান বা অধিক কার্যকর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
২. তথ্য সংরক্ষণ : তথ্য সংরক্ষণ এক সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ ভাণ্ডার হচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটারে যে কোন তথ্য অনায়াসে নিরপদে সংরক্ষণ করা যায়। চাহিবামাত্র যে কোন তথ্য উদ্ধারে সক্ষম কম্পিউটারে উপাত্তগুলাে ইচ্ছামাফিক সাজিয়ে রাখা যায়। কম্পিউটারের স্মৃতিকে গােপনীয়তার সাথে সংরক্ষিত যে কোন তথ্যের নিরপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা থাকে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার কারণে দিন দিন কম্পিউটার তথ্য সংরক্ষণের অভিনব পন্থা আবিষ্কৃত হচ্ছে। ফলে ক্মেই বেড়ে চলছে এর উপযােগিতা।
৩. যােগযােগ : কম্পিউটারের কণ্যাণে সমগ্র পৃথিবী চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। ফলে যােগাযােগ ক্ষেত্রে এক অভিনব বিপ্লব সাধন করেছে কম্পিউটার। কম্পিউটারের মাধ্যমে কোন শিক্ষার্থী সহজেই অন্য কোন শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা বিশ্বের কোন অত্যাধুনিক লাইব্রেরীল সাথে অনায়াসে যােগাযােগ স্থাপন করতে পারছে। ফলে সে ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছে। প্রত্যাশিত তথ্য বা সংবাদ। বিভিন্ন কাজে লাগাতে পারে কম্পিউটারের কল্যাণে। তাছাড়া এ ক্ষেত্রে কম্পিউটার উত্তেরােত্তোর খুলে দিচ্ছে নতুন দিগন্তের দ্বার।
৪. পরীক্ষার ফলাফল তৈরি ও মূল্যায়ণ : বর্তমান দেশে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরীক্ষা পদ্ধতি পুরােপুরি কম্পিউটার নির্ভর। পরীক্ষার খাতা দেখা, ফলাফল তৈরি ও প্রকাশ করার সমুদয় গুরু দায়িত্ব কম্পিউটারের। এক্ষেত্রে কম্পিউটার দ্রুত ও নির্ভুলতার সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। ফলে শিক্ষা পদ্ধতিতে এসেছে যুগােপযােগী বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কম্পিউটারের কার্যপদ্ধতির প্রতি আস্থা রেখেই দেশে প্রচলিত হয়েছে ফলাফল মূল্যায়নের ক্ষেত্রে গ্রেডিং পদ্ধতি। আর এ জটিল কাজটি সম্পাদনে কম্পিউটার ছাড়া কল্পনাই করা যায় না।
৫. উচ্চ শিক্ষায় : বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ এবং বুয়েটসহ বিশ্বের অনেক দেশেই আজ উচ্চশিক্ষায় কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। প্রােগ্রাম করা বিভিন্ন সফটওয়ারে ব্যাবহারিক বিষয়সহ প্রয়োজনীয় পাঠ আজ ঘরে বসেই কম্পিউটারে মনিটরে দেখে শুনে শিখা যায়।
৬. শিক্ষমূলক গবেষণায় : বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি, কৃষি, চিকিৎসা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির পূর্বশর্ত হল গবেষণা। এজন্য দেশেই রয়েছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সমস্যা হল সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিস্তারিত তথ্য সবসময় এক জায়গায় পাওয়া যায় না। এর সমাধানে এগিয়ে এসেছে কম্পিউটার। বিষয় শিরােনামসহ প্রতিটি গবেষণামূলক প্রকাশনার সার-সংক্ষেপ কম্পিউটারে দু'এক মিনিটেই খুঁজে দেখা সম্ভব। সম্ভব কম্পিউটার নেটওয়াকিং এর মাধ্যমে দেশী-- বিদেশী বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তথ্যের আন্তঃপ্রবাহ।
শিক্ষার বাহন পুস্তক প্রকাশনায় : সীসার অক্ষর দিয়ে কমেপােজ করে হস্তচালিত লেটার প্রেসে যে বইটি বের করতে এক বছর লাগত, কম্পিউটারের কল্যাণে সম্পূর্ণ অটোমেটিক মেশিনে এখন তা দু'এক দিনেই বের করা বের করা সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে নেই। কোন অস্পষ্ট ছাপা বা ভাঙা অক্ষরের বিড়ম্বনা, নেই লাইন আঁকাবাঁকা হবার ভয় বা লাইনস্পেস ছোট-বড় করতে মানা হাজার পৃষ্ঠার পুস্তক কম্পিউটার স্মৃতিতে রেখে দেয়া যায়, প্রয়ােজনে পুঃমুদ্রণও করা যায় যখন তখন। পুস্তক প্রকাশনার সুতিকাগার রাজধানী, ঢাকার বাংলাবাজার আজ তাই অনেকটাই কম্পিউটার নির্ভর।
সংবাদ প্রচার ও প্রকাশনায় : শিক্ষার অন্যতম হাতিয়ার সংবাদপত্রের প্রচার ও প্রকাশে কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য। টিভির প্রতিদিনকার সচিত্র সংবাদ পরিবেশনে ও সংবাদপত্রের প্রকাশনায় কম্পিউটার আজ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
উপসংহার : জাপান, আমেরিকা ব্রিটেন, ফ্রান্স, প্রভৃতি উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশে আজ শিক্ষার মাধ্যমে কম্পিউটার এমনকি পড়াশুনার এমন সব আবিষ্কৃত হয়েছে যে শিক্ষার্থী কম্পিউটারের সাথে কথােপকথনের মতই জানতে চেয়ে জবাব পেয়ে নিজে নিজেই অনেক কিছু শিখতে পারে। কম্পিউটারের সাহায্যে ইন্টারএ্যাকটিভ পদ্ধতি, নেটওয়ার্ক, ইন্টরনেট বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পদ্ধতিতে শিক্ষাদান ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। ঘরে বসেই আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের অনলাইন ডিগ্রি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। আমরা আশা করি, সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন এই একটিমাত্র যন্ত্র ব্যবহার করেই মানুষ তার সকল প্রকার প্রয়ােজন পূরণ করতে পারবে।
Post a Comment