SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা

জাতি গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা
ভূমিকা: ছাত্রজীবন ভবিষ্যতের পল্লবিত সৌন্দর্যের অস্ফুট কোরমালা । ছাত্রজীবনই হলাে মানুষের প্রস্তুতিপর্ব। এরই ওপর নির্ভর করে তার পরবর্তী জীবনের সফলতা-ব্যর্থতা। তাই ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলা অনুশীলনের প্রকৃষ্ট সময়। এ বিশ্বজাহান এক অদৃশ্য দুর্লজ্ঘ্য নিয়মের সূত্রে বাঁধা; ক্ষুদ্রতম অণু-পরমাণু হতে বিশাল বিশাল গ্রহ-নক্ষত্র পর্যন্ত সর্বত্রই এক কঠোর নিয়মের শাসন বিরাজিত। প্রভাতে পূর্বদিগন্তে সূর্যোদয় এবং দিবা শেষে পশ্চিম দিগন্তে সূর্যাস্ত সবই এক দুর্লঙ্ নিয়মের অধীন। মানুষের জীবনেও প্রয়ােজন সেই নিয়মের শাসন। মানুষের জীবনকে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত করে তুলতে হলে প্রয়ােজন উপযুক্ত শৃঙ্খলাবােধ। কেবল ব্যক্তিজীবনেই নয়, সামাজিক শান্তি ও কল্যাণের জন্যে সর্বত্র চাই - সামাজিক নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতিষ্ঠা। ছাত্রজীবনই হলাে এ নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাবােধ শিক্ষার প্রকৃষ্ট সময়।
সমাজ উন্নয়নে ছাত্রসমাজের ভূমিকা: জ্ঞান আহরণের জন্যে প্রত্যেক ছাত্র- ছাত্রীর শ্রমশীল ও অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। বস্তুত 'প্রত্যেক মানুষেব মাঝে অপার সম্ভাবনার বীজ নিহিত থাকে। অধ্যবসায় ও সাধনার দ্বারা সৈ সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে হয়। পৃথিবীতে যারা অবিনশ্বর কীর্তি স্থাপন করে অমর হয়েছেন তারা প্রধানত কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই তা করেছেন। শ্রমবিমুখ প্রতিভা বলতে কিছু নেই'- এ কথাটির প্রতি ছাত্র- ছাত্রীদের গভীর আস্থা রাখতে হবে। কঠোর শ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সহজাত প্রবৃত্তিকে শাণিত করে ছাত্র-ছাত্রীকে দেশ গঠনের পথে এগিয়ে যেতে হবে। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা সমাজ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। জ্ঞানার্জনের সাধনা কেবল পাঠ্যপুস্তকের সীমিত পৃষ্ঠাগুলােতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। পাঠ্যপুস্তক-বহির্ভূত ভালাে ভালাে বই পড়ে জীবনের জন্যে কল্যাণকর পাথেয় সঞ্জয় করতে হবে, বুদ্ধিবৃত্তিকে প্রখর করতে হবে। গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবান হতে হবে, শিষ্টাচার, বিনয়, কর্তব্যনিষ্ঠা, আনুগত্য, সৃষ্টিশীলতা অর্থাৎ সমাজের উন্নতির জন্যে যা কল্যাণকর তাই অর্জন করতে হবে। পরবর্তীকালে এসব জ্ঞান সমাজের উন্নয়নের কাজে লাগাতে হবে।
ছাত্রজীবনে সামাজিক নেতৃত্ব: সমাজের যেকোনাে কাজে ছাত্রসমাজ নেতৃত্ব দিতে পারে। মহামারি প্রতিরােধ, বন্যার সময় আর্তজনের সেবায় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্র-ছাত্রীরা শুধু অংশগ্রহণ করেই নয়, নেতৃত্ব দিয়েও এসব কাজকর্ম করতে পারে। স্বাধীন বাংলাদেশে সমাজসেবায় ছাত্রদের ভূমিকা উল্লেখযােগ্য। বন্যার্তদের সেবার জন্যে ছাত্ররা কায়িক পরিশ্রমই করে না, তারা চাঁদা সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করে এবং কখনাে কখনাে ব্যান্ড সাের ব্যবস্থা করে। এককথায় ছাত্রজীবনে সমাজসেবার দায়িত্ব ও কর্তব্য অনস্বীকার্য। আমাদের দেশের শতকরা ৭০ ভাগ লােকই নিরক্ষর। নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্র-ছাত্রীরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজ থেকে অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার দূর করা এবং জনসাধারণের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে সচেতন করে তােলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে ছাত্র-ছাত্রীরা সমাজের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। 
দেশগঠনের নামে ছাত্রসমাজের উদ্ধৃঙ্খলতা: সাম্প্রতিককালে ছাত্রসমাজের উচ্ছলতায় সকলেই বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। বলাবাহুল্য, সেই উদ্বেগ অমূলক নয়। তাদের উচ্ছঙ্খলতার কলঙ্কিত সাক্ষর পড়ে পরীক্ষা হলে, বাসে, পথে প্রান্তরে সমাজজীবনের অলিতে-গলিতে। ছাত্রসমাজ অগ্রযাত্রীর দল। তারা স্বভাবতই অগ্রসর হতে চায়, চায় কর্মব্যস্ততা, কিন্তু আজ তাদের সামনে অগ্রসর হওয়ার সকল পথ রুদ্ধ। কর্মহীনতার অভিশাপ তাদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশব্যাপী আশাহীনতা তাদের নিক্ষেপ করেছে এক গভীর নৈরাশ্যের অন্ধকারে। সেবাদান মানুষের মনুষ্যত্বের প্রকাশ এ আদর্শের আলােকে গণমানুষের যে কোনাে বিপদে সাড়া দিয়ে সেবাদানে ব্রতী হতে গিয়ে কেউ কেউ রাজনীতিক ব্যক্তি বা দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। সেবাদানের এ সময়টুকুতে রাজনীতিকদের স্বার্থবাদিতায় প্রভাবিত হয়ে তাদের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করে। স্বভাবত শৃঙ্খলাবােধ হারিয়ে হিংস্র রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আশ্রয় নিয়ে ছাত্রসমাজ উচ্ছৃঙ্খলতার কলঙ্কের বােঝা মাথায় বয়ে চলছে। তাছাড়া কুরুচি ও নৈতিকতার অবক্ষয়পূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ছাত্রসমাজকে উচ্ছঙ্খলতার পথে চালিত করে। ছাত্রসমাজে যদি শৃঙ্খলাবােধ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তবে তাদের উচ্ছলতার মূল কারণগুলাে বিলােপ করতে হবে। কেবল ছাত্রসমাজকে একতরফাভাবে দোষারােপ করে সমস্যার সমাধান হবে না। 
উপসংহার: বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল সমাজ ছাত্রসমাজের দায়িত্বশীলতা ও শৃঙ্খলাপূর্ণ ভূমিকা দাবি করে। ছাত্রসমাজকে একথা মনে রাখতে হবে যে, ছাত্রজীবনই হলাে দায়িত্ববােধে বিকাশের কাল, সামাজিক কর্তব্যবােধে দীক্ষিত হওয়ার সময়। বর্তমানে নৈরাশ্যের অন্ধকার কিংবা রুচি-বিকৃতির কুয়াশা অপসারিত হয়ে শীঘ্রই নতুন আশা ও আদর্শের সূর্যোদয় হবে। এরপর আসবে নতুন দিন, নতুন জীবন। এজন্যে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে আত্মনিয়ােগ করে আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে উঠতে হবে। 

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment