SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা শৈশব স্মৃতি

ফেলে আসা দিনগুলাে 
বা শৈশবের অনেক কথা
বা তােমার শৈশব স্মৃতি 
বা সেই যে আমার নানান রঙের দিনগুলি
ভূমিকা : মানবজীবনের মধুরতম ক্ষণ হল শৈশব। পৃথিবীর রূঢ় ব্যস্ততার সাথে তখনও শিশুর পরিচয় ঘটে না, জগৎ সংসারের দ্বেষ আবিলতা মুক্ত আবিলতা ঘিরে ধরে না তাকে, জীবনের প্রয়ােজন নামক দৈত্যটাও থাকে না শিশুর যাত্রাপথে, হিংসা, দ্বেষ আ নির্মল জীবনাংশের নামই শৈশব। শৈশবে মানুষ শিশুটির একমাত্র ভাবনা--
"ভাবে ছবে নিশু বড় হলে শুধু যাবে কেনা,
বাজার উজাড় করি সমস্ত খেলনা। "
এর পর মানব শিশু বড় হয়ে সংসার ধূলিজালে জড়িয়ে পড়ে, সংসারের কোলাহলের ভেতর হারিয়ে যায় শৈশবের দিনক্ষণ সমস্ত ভাবনা। পড়ে থাকে শৈশবের স্মৃতি। তখন আবার মনে হয়।
"বহুদিন পরে মনে পড়ে আজি পল্লী মায়ের কোল 
ঝাউ শাখে যেথা বনলতা বেঁধে হরষে খেয়েছি দোল। " 
আরও কত কথা, কত স্মৃতি থাকে যা মানুষ ভুলতে  পারে না ‌। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জীবনের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকে ছেলেবেলার স্মৃতি।
আমার ছেলেবেলা ও স্মৃতি কথা : আমার শৈশবের রঙিন ছবিগুলাে মনের ভেতর এতােই গভীরভাবে দাগ কেটে গেছে যে, আজও কোন মতে তা আমি ভুলতে পারি না। তবে দোলনায় দোদুল দোল খাওয়ার সে দিনগুলাে মানুষের কারুরই যেমন মনে থাকে না, আমারও নেই। একটু আধটু যখন জ্ঞান হয়েছে কিছু কিছু যখন বুঝতে পারছি, আমি তখনকার কথা বলছি। বয়স তখন আর কত আমার। ছসাত বছর হবে হয়ত। ও বয়সের ছেলেদের মত আমারও তখন কড়া নজর বর্তমান কলার রং ধরা কাদির উপর, লাল হয়ে উঠা লিচুর উপর, কাঁচা তেঁতুল আর ডাসাডাসা আমের উপর। বৈশাখ মাসে ভরদুপুরে ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম আর ছড়া কাটতাম 
“আম পড়, আম পড় 
পাকা আম, ডাসা আম 
টক ঝাল মিষ্টি 
আহ এলাে বুঝি বৃষ্টি।” 
কোন কোন দিন সত্যি এসে যেত বৃষ্টি। ভারি আনন্দ লাগত বৃষ্টিতে ভিজতে, আবার ভয় লাগত মায়ের বকুনি খেতে হবে বলে। মনে আছে, ছেলে বেলায় ছবি আঁকার প্রতি আমার বেশ ঝোঁক ছিল। ঐগুলোতাে আর ছবি ছিল না, ছিল কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং। কাগজ এক টুকরাে পেলেই কোন রকমে বড় ভাই বােনদের একটা পেন্সিল যােগাড় করা ছিল আমার নেশার মত। তারপর নিরালা জায়গায় বসে চিত্রবিদ্যা অনুশীলনে নিয়ােজিত হতাম। 
খাবার ঘরের জিনিসগুলাের উপরেও ভারি লােভ ছিল আমার। আমাকে দেখে হাস্তাম মনে মনে ইস, কি বােকারে নিজের হাতে অতগুলাে খাবার বানিয়ে বানিয়ে কাচের আলমারীতে সাজিয়ে রেখেছেন, অথচ মুখেও দিচ্ছে না। দুনিয়াতে আমার মত বােকা মানুষ বােধ হয় আর নেই। কিন্তু উনি না খেলে কি হবে, আমাকে ও দেন না। একদিন লুকিয়ে খেয়ে ভীষণ মার খেয়েছিলাম আম্মার হাতে। এরপর বয়স একটু বাড়ল। বুঝলাম, বড় হয়েছি। তখন আমাকে পেয়ে বসল আরেক নেশায়। ছােট বােনটাকে ফুট-ফরমাস কাজে খাটাতে ভারি আনন্দ পেতাম। একটু সুযোগ পেলেই হুকুম করতাম 'এক গ্লাস পানি আন। পানি আনতে না আনতেই দ্বিতীয় দফা আদেশ জারি করে বসতাম, পাখার বাতাস কর'। বেচারির কথা না শুনে উপায় ছিল না। নড়চড় হয়েছে কি দমাদম বসিয়ে দিতাম পিঠের উপর। 
শৈশবের সে দিনগুলাে ছিল ভারি মজার। রাতে মায়ের কাছে শুতে গিয়ে রাজকুমার আর রাজকুমারির গল্প শুনতাম। দেত্য দানবের গল্প শুনতে শুনতে ঢুকে যেতাম একেবারে মায়ের কোলের ভেতর। ঘুমিয়ে পড়তাম কখন টেরও পেতাম না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চিন্তা-ভাবনাও বদলাতে শুরু করল। এক সময় ওরকম দুষ্টুমিতে আর মন যেতে চাইত না। অন্য রকম কিছু ভাবতে ও করতে ভালাে লাগত। তখনই টের পেলাম, শৈশব পেরিয়ে কৈশােরে পা রাখতে চলেছি। এমনি করে একদিন কেটে যায় কৈশাের, আসে যৌবন। এরপর বার্ধক্য। ফেলে আসা দিনগুলাের দিকে তখন তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মানুষ। জগতের কি নিয়ম। 
উপসংহার : মানবজীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়েই মানুষকে এগিয়ে যেতে হয়। শৈশবের স্বপ্ন দেখার অভিজ্ঞতা মানুষ জীবনে আর দ্বিতীয়বার খুঁজে পায় না। শৈশবের কথা তাই মনে পড়লে সবার চোখই হয়ে উঠে অশ্রসজল। তাইত বিশ্ব কবি লিখেছিলেন, 
"দিনগুলি মাের 
সােনার খাঁচায় রইল না রইল না 
সেই যে আমার 
নানা রং-এর দিনগুলি।" 
শৈশবের স্মৃতি কতই না আনন্দঘন, কতই না স্বপ্নময়। শৈশব মানবজীবনের এক অম্লান অধ্যায়।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment