ঔষধ খাওয়ার নিয়ম ও নির্দেশিকা
অসুস্থ হলে আরোগ্য লাভের জন্য আমরা সাধারনত ওষুধ সেবন করি। আসলে আমাদের প্রায় সবারই ধারনা যে শারিরিক সকল সমস্যার সমাধান ঔষধ সেবনের মাধম্যেই হবে। এর কারণ অসুস্থ হলে ওষুধ খেলেই আরোগ্যের পাশাপাশি আমরা মানসিক প্রশান্তিও অনুভব করি। কিন্তু শুধু ওষুধ খাওয়াই আসল নয়, খেতে হবে সঠিক নিয়মে। নিয়ম অনুযায়ী সঠিক সময়ে ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমেই ওষুধের সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পাওয়া সম্ভব।
ধরা যাক, চিকিত্সক কোন ওষুধ দিনে তিনবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমবার সকাল নয়টায় খাবার পর, দ্বিতীয়বার দুপুর একটায় খাবারের পর এবং তৃতীয়বার রাত ১০টায় রাতের খাবারের পর ওষুধ খেলেন।
তারপর দিন একই নিয়ম চলল। এক্ষেত্রে খেয়াল করুন, চিকিত্সকের পরামর্শমত দিনে তিনবার ওষুধ খেলে নিয়ম ঠিকই মানা হল। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যকার সময় চার ঘন্টা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজের ক্ষেত্রে সাত ঘণ্টা এবং পরদিন সকালবেলা ওষুধ সেবনের মধ্যকার বিরতি সময় ১৩ ঘন্টার। বিরতির এই মধ্যবর্তী সময়ের তারতম্যকে চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভাষায় ডোজ ফ্লাকচুয়েশান বলে।
চিকিত্সক দিনে তিনবার ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেয়ার মানে হল, ওষুধটি ঠিক ছয় ঘণ্টা পর পর গ্রহণ করতে হবে, তবেই ওষুধের সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পাওয়া সম্ভব হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সব ওষুধই আমাদের শরীরে থাকে। সব ওষুধের একটি নির্দিষ্ট আয়ু থাকে। এরপর থেকে ডোজের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগে যদি দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করা হয় তা ওভার ডোজ হয়ে যাবে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। অন্যদিকে, শরীর থেকে ওষুধটি বের হয়ে যাওয়ার অনেকক্ষণ বাদেও যদি পরবর্তী ডোজ গ্রহণ না করা হয় তবে জীবাণু ওষুধের বিপরীতে প্রতিরোধ গড়ে রোগটির স্থায়ীত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই আমাদের উচিত সময় হিসেব করে ওষুধ গ্রহণ করা।
ওষুধের সময় চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ভাগ করে নিতে হবে। ঔষধ যদি দিনে একবার হলে তবে ঠিক ২৪ ঘণ্টা, দুইবার হলে ১২ ঘন্টা পর এবং তিনবার হলে ছয় ঘন্টা পরপর গ্রহণ করতে হবে। চিকিত্সক কিছু কিছু ওষুধ খাওয়ার আগে অর্থাত্ খালি পেটে গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই এসব ওষুধ খাবারের ৩০-৪৫ মিনিট আগে সেবন করতে হবে। কোনও অসুস্থতার জন্য আগে যদি অন্য ওষুধ গ্রহণের প্রয়োজন হয়, সেই তথ্য চিকিত্সককে অবশ্যই জানাতে হবে। কারণ কিছু কিছু ওষুধ একটির সাথে অন্যটি মিথষ্ক্রিয়া করে সমস্যার সৃষ্টি করে। সম্ভব হলে ওষুধের লেবেল পড়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা জেনে নিন। অনেকের কিছু নির্দিষ্ট ওষুধে সংবেদনশীলতা থাকতে পারে। সংবেদনশীলতার সাধারণ কয়েকটি লক্ষণ হল জ্বর, মাথাব্যাথা, এলার্জি, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। এক্ষেত্রে চিকিত্সককে অবশ্যই সংবেদনশীলতার কথা জানাতে হবে। পরিশেষে, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধই সেবন করা উচিত নয়।
Post a Comment