দুর্নীতি একটি সামাজিক ক্যান্সার, যা সমাজের প্রতিটি স্তরে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে। এটি শুধু ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, পুরো দেশের আর্থিক, সামাজিক, ও রাজনৈতিক অবকাঠামোর ওপর প্রভাব ফেলে, যা সমাজকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতি মূলত ক্ষমতা ও সুযোগের অপব্যবহার, যেখানে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠী স্বার্থে আইন ও নিয়মের লঙ্ঘন ঘটে।
দুর্নীতি সাধারণত ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়, যারা সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। তারা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে বা বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করে। এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে, কারণ তারা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে, দুর্নীতির কারণে অর্থনৈতিক অসমতা বাড়ে এবং সমাজের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী প্রচুর সম্পদ সংগ্রহ করে, যখন সাধারণ জনগণ দারিদ্র্য ও কষ্টে থাকে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে দুর্নীতি বিশেষত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ পর্যন্ত সবাই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকে। এর ফলে, দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় এবং সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। যেমন, দুর্নীতির কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ও সড়ক নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে যথাযথ সেবা পৌঁছায় না। জনগণের টাকায় পরিচালিত এসব সেবা সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়ায় রাষ্ট্রের উন্নয়ন ব্যাহত হয় এবং দারিদ্র্য চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
দুর্নীতির কারণে নৈতিক অবক্ষয় ঘটে এবং সমাজে আইনের শাসন দুর্বল হয়ে যায়। যখন মানুষ দেখে যে দুর্নীতির মাধ্যমে কেউ শাস্তি ছাড়াই লাভবান হতে পারে, তখন সমাজে অনৈতিক কার্যকলাপ বেড়ে যায়। এর ফলে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সঠিক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে না এবং তারা সহজ পথের অনুসারী হয়, যা দেশের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলে।
দুর্নীতি রোধে প্রথমে দরকার সুষ্ঠু ও কার্যকরী আইন প্রণয়ন এবং তার যথাযথ প্রয়োগ। পাশাপাশি, জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতা ও সততার উপর জোর দিতে হবে। গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকেও দুর্নীতি প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। দুর্নীতি নির্মূল করা না গেলে একটি জাতির উন্নয়ন শুধু থমকে যাবে না, সেটি ধ্বংসের পথে এগোবে। তাই, সমাজ ও রাষ্ট্রের সুস্থতা ও উন্নতির জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করা অত্যন্ত জরুরি।
Post a Comment